প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩, ৩:২৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ১৫, ২০২৩, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অন্ধ কোরআনের হাফেজ এরা
এদের বুকের ভেতরে গেঁথে আছে আল-কোরআনের প্রতিটি অক্ষর।লক্ষ্মীপুর শহরের এক মাদ্রাসা যেখানে শুধু মাত্র অন্ধদের জন্য কোরআন শিক্ষার স্থান।খুজে পেয়েছিলাম শীতকালে।সেদিনই ভেবেছিলাম রমজানে এই কোরআনের অন্ধ পাখিদের আমার বাংলোয় নিয়ে আসবো।
এসপির বাংলো আজ ধন্য হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অন্ধ হাফেজদের পদধুলিতে।অনেক অনুভূতির জন্ম হলো আজ।অনেক ভালো লাগার স্নিগ্ধতার পরশ একে দিলো আমার হৃদয়ে।
খুব যে স্বচ্ছল অন্ধদের এই মাদ্রাসা তা নয়।তাই এদের জন্য ঈদের নতুন পাব্জাবী পায়জামার ব্যাবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।রোযাদার হাফেজদের ইফতারি করানো আর সাথে উপহার দেয়া এটিই আমার লক্ষ্য ছিলো যা আজ পূর্ণতা পেলো।
বাংলোতে গতকাল থেকেই প্যান্ডেল করা।টেবিল চেয়ারের আগমন।নানান বাহার কাপড়ের উড়ন্ত দোলা।টেবিলের পশরা সাজানো।সকাল থেকে লোকজনের আয়োজন।পহেলা বৈশাখের সকালের আনুষ্ঠানিকতার ফাঁকেই খোজ নেয়া।অন্ধ হাফেজরা আজ আসবে তাই তারাই আজ ভিআইপি মেহমান আমার।
ফুল দিয়ে বরণ করে নিলাম আমি আর আমার পরিবার।মেইন গেটে দাঁড়িয়েই তাদের স্বাগত জানালাম।কুশলাদি বিনিময় তাৎক্ষণিক সেখানেই।একঝাক কোরআনের পাখি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ফুল যে দিবো তা আমি হাত বাড়িয়ে,দিতেই খেয়াল করলাম তারা তো দেখতে পাচ্ছে না।আমি ফুলটা তাদের দিকে বাড়িয়ে তাদের হাত নিজে টেনে নিয়ে,তাদের হাতে তুলে দিতে থাকলাম।
কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।কে,আগে, কে পরে তার কোন অনুভূতিই নেই তাদের।একে অপরের হাত ধরে আছে।সামনে যেতে বললেও ঠিক কোনদিকে যাবে তা তারা বুঝতে,পারে না।এক এক করে আমাদের লোক ধরে ধরে নিয়ে যেতে হচ্ছে।মাদ্রাসার শিক্ষক সেও অন্ধ।সবার মাঝেই বেশ উৎফুল্ল ও ভালো লাগার অনুভব প্রকাশিত হলো তাদের অন্ধনুভতির ব্যাকরণে।
একেক টেবিলে একেক অফিসার কে বসতে বললাম তাদের সাথে।আমিও বসলাম তাদের সাথে এক টেবিলে।তাদের সামনের প্লেটে খাবার,এক প্লেটে ইফতার,এক প্লেটে ফল সমূহ,সামনে রাখা চারটা গ্লাসে চার রকমের শরবত,পাশেই প্যাকেটে রাখা বিরিয়ানী আর সফট ড্রিংক্স আর মিনারেল ওয়ারাটা।সুসজ্জিত সাজে টেবিলের উপর ছড়িয়ে আছে শিল্পের সমাহারে নানান পদের উপকরণের রঙ্গিনে।
কিন্তু কিছুই দেখতে,পায় না তারা।দু একজন একটু সামান্য দেখতে পায় যা যৎসামান্যই বলা যায়।আযান দিলে ইফতার শুরু হয়ে যায়।দেখছি অন্ধ তারা খাবার হাত দিয়ে হাতরাতে,থাকছে।পাশে আমি বার বার বলে দিচ্ছি, এটা খাও,এট এই শরবত,এটা এই খাবার ভাবছি আর ভাবছি।
কত ভাগ্যবান আমি।আমার দৃষ্টি আছে।কত অসহায় তারা।আমি শুধুই দেখছি তাদের খাওয়ার মুহুর্ত গুলো।আশে পাশের সবাইকে বলে দিচ্ছি বার বার, ওদের সাহায্য করুন বাংলোর এক পাশেই নামাযের ব্যাবস্থা করেছিলাম।একসঙ্গে নামায আদায় করলাম।অন্ধ মাদ্রাসার হুজুরের ইমামতিতেই নামায আদায়।চমৎকার সুরা তেলোয়াত করলেন।ক্বেরাতের সুরে যেন মূর্ছা গেলাম।নামায শেষ করেই ওদের জন্য বানানো ঈদের উপহার বিতরণ করলাম।
সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় বিদায় বেলায় সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল।আমার দিকে এলোমেলো ভাবে হাত বাড়িয়ে দিতে থাকলো হ্যান্ডসেক করার জন্য।আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমার বুকের সাথে তাদের বুক চেপে ধরে যেন পবিত্রতার গন্ধে রঞ্জিত হয়ে গেলো আমার অন্তরের গহীনে গহীন। মাথায় হাত দিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলো বার বার। একজীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া
আর কি কিছু হতে পারে...? এসপির বাংলো আজ ধন্য হলো এমন মানুষদের পদচারণায়।শুকরিয়া মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে।এমন মহান মানুষদের বাংলোয় এনে ইফতার করানোও এক বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার।